দলিলে ভুল থাকলে নামজারি যেভাবে করবেন।
আপনার দলিলে ভুল থাকলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
কিন্তু বাস্তবতা হলো — আইন মেনে চললে এই ভুল সংশোধন করে নামজারি করানো সম্ভব।
দেখে নিন, কীভাবে ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান করবেন।
Table of Contents
🏕 ১. প্রথমে দলিল ও রেকর্ড যাচাই করুন
আপনার দলিলে নিচের কোন তথ্য ভুল আছে তা খুঁজে বের করুন।
▪ দাগ নম্বর ( Plot No.)
▪ খতিয়ান নম্বর
▪ মালিকের নাম বা ঠিকানা
এছাড়া রেকর্ড (CS, SA, RS), হাল খতিয়ান, দখলের প্রমাণপত্র দেখে মিলিয়ে নিন।
🔹 ২. ভুল থাকলে Rectification Deed তৈরি করুন
যদি মূল দলিলদাতা এখনো জীবিত থাকেন, তাহলে উভয়ের সম্মতিতে।
▪ Rectification Deed (সংশোধন দলিল) করে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্টার করুন।
▪ এতে ভুল দাগ বা তথ্য সংশোধন করে সঠিক তথ্য উল্লেখ করুন।
এই দলিল রেজিস্টার্ড হলে পরবর্তীতে আর সমস্যা হয় না।
🏕 ৩. দলিলদাতা না থাকলে আদালতে যেতে হবে।
▪ দলিলদাতা মারা গেলে বা অসহযোগিতা করলে, আপনাকে সিভিল কোর্টে Rectification Suit করতে হবে
▪ মামলায় প্রমাণ করতে হবে যে শুধু দাগ ভুল, জমির অবস্থান ও দখল ঠিক আছে
▪ আদালতের আদেশ অনুযায়ী দলিল সংশোধন হবে
🏕 ৪. সংশোধন হওয়ার পর নামজারির আবেদন করুন। সংশোধিত দলিল বা আদালতের রায়সহ।
▪ সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করুন
▪ ফরম পূরণ, খাজনা পরিশোধ ও কাগজপত্র জমা দিয়ে নামজারি সম্পন্ন করুন
🏕 ৫. নিজে করুন, দালালের উপর নির্ভর করবেন না
▪ দালালদের মাধ্যমে কাজ করলে খরচ ও হয়রানি বাড়ে
▪ সব কাজ নিজের মাধ্যমে করুন, বা বিশ্বস্ত আইন সহায়তা নিন
🏕 ৬. ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকুন
দলিল করার সময়:
▪ দাগ ও চৌহদ্দি মিলিয়ে নিন
▪ দলিল লেখককে ভুল ধরিয়ে দিন
▪ ফাইল রেজিস্ট্রির পর পরেই নিজে যাচাই করুন
জমি কেনার পরে নিচের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ঝামেলায় না পড়তে হয়:
🏠 ১. নামজারি (মিউটেশন) করা:
রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে আপনার নামে জমির নামজারি/মিউটেশন করতে হবে।
এটি রাজস্ব অফিস বা সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে আবেদন করে করতে হয়।
নামজারি না করলে সরকারি রেকর্ডে জমির মালিক হিসেবে আপনাকে দেখাবে না।
🏠 ২. খাজনা পরিশোধ:
নামজারি হয়ে গেলে খতিয়ান ও দাগ অনুযায়ী খাজনা (ভূমি কর) দিতে হবে।
খাজনা দেয়ার রশিদ (DCR) সংরক্ষণ করুন। Land Solution farm.
✅ ৩. ভূমি রেকর্ড আপডেট চেক করা:
নতুন খতিয়ানে আপনার নাম সঠিকভাবে উঠেছে কি না তা যাচাই করুন (নতুন RS/CS খতিয়ান সংগ্রহ করুন)।
✅ ৪. জমির দখল গ্রহণ:
জমির দখল বুঝে নিন এবং সীমানা নির্ধারণ করে স্থায়ী চিহ্ন (বাউন্ডারি বা বেড়া) দিয়ে রাখুন।
প্রয়োজনে এলাকার লোকজন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেম্বারকে দখলের সময় উপস্থিত রাখুন।
✅ ৫. পূর্ব মালিকের পাওনা পরিশোধ:
কোনো টাকা বাকী থাকলে তা চুক্তি অনুযায়ী পরিশোধ করে লিখিত রশিদ সংগ্রহ করুন।
✅ ৬. দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ:
দলিল, খতিয়ান, পর্চা, খাজনার রশিদ, নামজারির কপি – সব কিছু আলাদা ফাইল বা ডিজিটাল কপিতে সংরক্ষণ করুন।
✅ ৭. ভবিষ্যৎ সমস্যা এড়াতে সতর্কতা:
কেউ জাল দলিল তৈরি করছে কিনা বা জমি নিয়ে মামলা আছে কিনা তা নজরে রাখুন।
প্রয়োজনে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
🔒 অতিরিক্ত পরামর্শ:
চাইলে জমির উপর "নিবন্ধন নিষেধাজ্ঞা (Deed Restriction)" দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে আপনার অনুমতি ছাড়া বিক্রি বা হস্তান্তর না করা যায়।
জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয় কি।
আপনারা জমির #দলিল ২ টি উপায়ে উঠাতে পারবেন।
@ প্রথম উপায়: প্রথমে নিচের তিনটি ধাপ অনূসরণ করুণ!
১) প্রথম ধাপ : প্রথমে #জমির দাগ নাম্বার জানুন।
আপনি যে দাগটি জানেন সেটা কি দাগ তা নিশ্চিত হোন।
আপনি যে দাগটি জানেন সেটা
cs দাগ/SA/MR/MRR/PS, না RS দাগ, না BS/BDRS দাগ নিশ্চিত হোন ।
২) ধাপ ২:দাগ নম্বর জেনে খতিয়ান নাম্বার জানুন।
কোথা থেকে জানবেন? ইউনিয়ন ভূমি বা তফসিল অফিস হতে।
৩) ধাপ ৩: খতিয়ানে যদি নামজারি বা খারিজ করা থাকে তাহলে দেখুন কার নামে নামজারি করা। নামজারি বা জমাভাগের কেস বা নথি বের করে নিন। নামজারি বা খারিজের নথিতে দলিলের নাম্বার দেয়া থাকে ওইখান থেকে দলিল নাম্বার নিয়ে নকল বা সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করবেন।
-----কোথায় করবেন? জেলা রেকর্ড রুম অথবা সাব রেজিস্ট্রি অফিস। আপনার জমির দলিল যদি বর্তমান সাল থেকে ৫-৬ বছর আগের হয় তাহলে সাব রেজিস্টি অফিস হতে দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি নিতে পারবেন।
আর দলিল টি যদি অনেক বছর আগের হয় তাহলে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস এর জেলা রেকর্ড রুম হতে সংগ্রহ করতে হবে।
----উপায় ২:-তিনটি ধাপ অনুসরণ করে দলিল নম্বর বা দলিল না পান তখন দলিল তল্লাশি বা সার্চ করতে হবে।
🔎 তল্লাশি বা সার্চ করতে যা যা লাগবে -
→সম্ভাব্য সাল।
→ দলিল দাতা ও গ্রহীতার নাম।
→ দলিল দাতা ও গ্রহীতার বাবার নাম।
→ দাগ নম্বর ও মৌজার নাম।
🏕 জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয় কি?
জমির দলিল হারিয়ে গেলে করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে করলে হারিয়ে যাওয়া দলিল সহজে পাওয়া যাবে। অনেক সময় অসাবধানতা বা দূর্ঘটানাজনিত কারনে মূল্যবান দলিল বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারিয়ে যায়।
যেমনঃ- কোন দুর্ঘটনায় বা আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারনে বা বন্যার প্রাকৃতিক দুর্যোগে মূল্যবান কাগজ বা দলিল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ঠিক এই সময় হারানো কাগজ ফিরে পাবার জন্য বা কাগজের নকল সংগ্রহ করার জন্য পুলিশের সাহায্য নেয়া যাবে।
📢 ছেলে-মেয়েকে দলিল পড়া শেখান।
কারণ দলিল বোঝা মানেই নিজের সম্পদ রক্ষা করা।
১. দলিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও শব্দের ব্যাখ্যা: দলিলে ব্যবহৃত শব্দ / টার্ম অর্থ:
🔴 বিক্রেতা (Vender): যে ব্যক্তি জমি বিক্রি করছেন
🔴 ক্রেতা (Purchaser): যে ব্যক্তি জমি কিনছেন
🔴 দলিল নম্বর /ইউনিক নম্বর – রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দেওয়া হয়
🔴 জেলা/উপজেলা/মৌজা: জমি যে এলাকায় আছে তার প্রশাসনিক পরিচয়
🔴 খতিয়ান নম্বর (Khatian No.) জমির মালিকানা সম্পর্কিত রেকর্ড নম্বর
🔴 দাগ নম্বর (Dag No.) নির্দিষ্ট জমির প্লট নম্বর
🔴 জমির পরিমাণ কাঠা/শতক/বিঘা/বর্গফুট ইত্যাদিতে জমির পরিমাণ
🔴 জমির শ্রেণি বসতভিটা/নাল/ডাঙ্গা/চাষযোগ্য ভূমি ইত্যাদি
🔴 মূল্য (Consideration Money): জমি বিক্রির চুক্তিকৃত মূল্য
🔴 ভোগদখল হস্তান্তর জমি দখল হস্তান্তরের ঘোষণা।
🔴 সীমানা চারদিকের প্রতিবেশী কারা এবং তাদের জমি।
২. জমির মাপজোক ও একক রূপান্তর:
একক সমান
১ একর ১০০ শতক = ৬০ কাঠা (ঢাকা)
১ বিঘা ২০ কাঠা
১ কাঠা ১৬ আনা = ১.65 শতক (ঢাকা)
১ শতক ৪৩৫.৬ বর্গফুট
১ কাঠা (ঢাকা) ৭২০ বর্গফুট।
✅ মনে রাখবেন:
বিভিন্ন জেলায় ১ কাঠার পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে যাচাই করতে হবে।
৩. দলিল পড়া শেখার সহজ পদ্ধতি:
Step 1: প্রাথমিক তথ্য যাচাই করুন
দলিল নম্বর, তারিখ, রেজিস্ট্রি অফিস
বিক্রেতা ও ক্রেতার নাম, পিতা/স্বামীর নাম
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ঠিকানা।
Step 2: জমির বিবরণ মিলিয়ে নিন।
মৌজা, খতিয়ান, দাগ নম্বর
জমির পরিমাণ ও সীমানা
জমির শ্রেণি ও অবস্থান (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে কে আছেন?)
Step 3: আইনগত বিবরণ বোঝার চেষ্টা করুন।
দলিলে লেখা থাকে, জমির দখল হস্তান্তর করা হলো কি না
বিক্রেতার মালিকানার উৎস: উত্তরাধিকার/ক্রয়/বণ্টন
কোনো মামলা বা দায় আছে কি না তা উল্লেখ থাকে
৪. সন্তানকে শেখান দলিল কেন গুরুত্বপূর্ণ:
জমির মালিকানা প্রমাণ করার একমাত্র আইনগত দলিল।
ভবিষ্যতে জমি নিয়ে প্রতারণা ঠেকাতে দলিল বোঝা জরুরি।
নারী সন্তানদের এই শিক্ষা দিলে তারাও জমির ব্যাপারে সচেতন হবে।
৫. দলিল যাচাই করার আধুনিক পদ্ধতি:
www.eporcha.gov.bd বা www.land.gov.bd থেকে অনলাইনে খতিয়ান যাচাই।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিলের সত্যতা পরীক্ষা।
স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে খাজনা ও মিউটেশন রেকর্ড চেক।
৬. চলুন দলিল পড়া শিখি:
উক্ত – অর্থ: উল্লেখিত।
দলিলে বারবার "উক্ত জমি", "উক্ত দলিল" ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার হয়, যার মানে হলো আগেই যেটা বলা হয়েছে তা।
হস্তান্তর – অর্থ: মালিকানা বা ভোগদখল দেওয়া।
যখন লেখা থাকে “জমি হস্তান্তর করিলাম”, তখন বোঝায় জমি আইনগতভাবে অন্যের নামে দেওয়া হয়েছে।
দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে – অর্থ: জমির দখল হাতে হাতে দেওয়া হয়েছে।
এর মানে দলিলের পর জমি ব্যবহার করার অধিকারও ক্রেতার হাতে দেওয়া হয়েছে।
খালি ও নির্বন্ধ জমি – অর্থ: জমিটির উপর কোনো মামলা, দাবি, বা ঋণ নেই।
এই শব্দগুলো দেখিয়ে বিক্রেতা নিশ্চিত করেন যে জমিটি ঝামেলামুক্ত।
সীমানা – অর্থ: জমির চারপাশে কে আছে, কোন দিকে কার জমি, তা বর্ণনা করা হয়।
যেমন: “উত্তরে অমুক, দক্ষিণে তমুক…”
সর্বমোট পরিমাণ জমি – অর্থ: দলিলে বিক্রি হওয়া জমির মোট পরিমাণ।
শতক, কাঠা বা বর্গফুট এককে দেওয়া হয়।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত – অর্থ: জমিটি পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া।
স্বত্বাধিকার – অর্থ: মালিকানা অধিকার।
যে ব্যক্তি আইনগতভাবে জমির মালিক, তিনি স্বত্বাধিকারী।
দখল স্বত্ব – অর্থ: জমিটি ব্যবহার ও ভোগ করার অধিকার।
মোট মূল্যে বিক্রি করিলাম – অর্থ: নির্ধারিত দামে জমিটি বিক্রি করা হয়েছে।
অছত্র – অর্থ: কোনো অভিযোগ বা দাবির বাইরে।
অছত্র দলিল মানে এতে কোনো মালিকানা বিরোধ নেই।
নিরুপায় হইয়া – অর্থ: বাধ্য হয়ে।
অর্থনৈতিক বা পারিবারিক কারণে জমি বিক্রি করার পরিস্থিতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
পরবর্তী উত্তরাধিকারগণ – অর্থ: ভবিষ্যতের উত্তরাধিকারী, যেমন সন্তান বা নিকট আত্মীয়।
পরিসমাপ্ত – অর্থ: কোনো কাজ বা মালিকানা শেষ হওয়া।
যেমন: "আমার মালিকানা এখানেই পরিসমাপ্ত হইল।"
আইনগত জ্ঞাতি – অর্থ: বৈধ আত্মীয় যাদের জমির উত্তরাধিকার পাওয়ার অধিকার আছে।
অবিচ্ছিন্ন দখল – অর্থ: কোনো বাধা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জমিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
অর্পিত – অর্থ: হস্তান্তর করা বা উৎসর্গ করা।
যেমন: "জমিটি মসজিদের নামে অর্পিত করিলাম।"
মূল দলিল – অর্থ: যেই দলিল দ্বারা প্রথম মালিকানা সৃষ্টি হয়, তাকে মূল দলিল বলা হয়।
পুনঃবিবেচনা – অর্থ: ভবিষ্যতে কোনো কারণে দলিলটি সংশোধন বা পর্যালোচনা করা হতে পারে।
✅ রেজিস্ট্রি / নিবন্ধন:
– দলিলকে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করা। জমি কেনা-বেচা তখনই বৈধ হয়, যখন তা রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্টার করা হয়।
মিউটেশন – নামজারি। জমি ক্রয়ের পর নতুন মালিকের নামে খতিয়ানভুক্ত করার সরকারি প্রক্রিয়া।
খাজনা / ভূমি রাজস্ব
– সরকারকে দেওয়া বার্ষিক কর, যা জমির মালিক হিসেবে পরিশোধ করতে হয়।
বণ্টননামা
– একাধিক উত্তরাধিকারীর মধ্যে জমি ভাগ করে দেওয়ার দলিল।
অসিয়তনামা
– জীবিত অবস্থায় কেউ মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কে পাবে তা লিখে গেলে সেটি হয় অসিয়তনামা।
প্রত্যয়নপত্র
– সাধারণত ওয়ারিশ বা অভিভাবকত্ব প্রমাণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রদত্ত দলিল
– যেটি কারও নামে সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য দেওয়া হয়েছে (যেমন দানপত্র/হেবা দলিল)।
হেবা
– ইসলামী বিধান অনুযায়ী দান। হেবা দলিলে লেখা থাকে বিনিময়মূল্য ছাড়া জমি দেওয়া হলো।
দানপত্র
– সম্পত্তি কাউকে উপহার দেওয়ার লিখিত ঘোষণা।
দায়-দেনা মুক্ত
– যার অর্থ হলো জমিটির ওপর কোনো ঋণ, মামলা বা গচ্ছিত বাধ্যবাধকতা নেই।
গচ্ছিত দলিল।
– যে দলিল ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রাখা হয়েছে।
মৌজা
– ভূমি জরিপে ব্যবহৃত একক এলাকা, সাধারণত একটি গ্রামের মতো প্রশাসনিক ইউনিট।
উত্তরাধিকার সনদ
– ওয়ারিশ হিসেবে কেউ জমির মালিক কিনা, তা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ।
নালিশী জমি
– যেই জমির ওপর মামলা বা বিরোধ চলছে।
নামজারি খতিয়ান
– দলিলের ভিত্তিতে নাম পরিবর্তন করে মালিকানা সরকারি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা।
জমা, খারিজ, চলন
– জমা = রাজস্ব পরিশোধ, খারিজ = পুরাতন মালিকের নাম কাটা, চলন = বর্তমান মালিকের নাম চালু।
ব্যবসায়িক স্বার্থে হস্তান্তর
– জমি যেহেতু ব্যক্তিগত না বরং ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে বিক্রি করা হয়েছে।
বিকল্প মালিকানা
– কোনো ব্যক্তি মূল মালিক না হলেও, আইনত বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হওয়ার অধিকার রাখে।
অর্পিত সম্পত্তি
– পরিত্যক্ত/দখলকৃত জমি, যা পরে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুনরায় বিক্রয় নিষিদ্ধ
– দলিলে বলা হয় জমিটি বিক্রির পরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আর বিক্রি করা যাবে না। সাধারণত হেবা বা সরকারি জমি হস্তান্তরে ব্যবহৃত হয়।
আংশিক দলিল:
– একাধিক ব্যক্তি মিলে জমি কিনলে, তাদের অংশ নির্দিষ্ট করে আলাদা দলিল করা হয়।
অর্পণযোগ্য নয়:
– যার অর্থ, জমিটি কাউকে দান বা হস্তান্তর করা যাবে না। সাধারণত ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
তফসিল:
– জমির বিস্তারিত বিবরণ: মৌজা, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, পরিমাণ, সীমানা ইত্যাদি।
মৌখিক হেবা:
– ইসলামী আইন অনুযায়ী, মৌখিকভাবে জমি কাউকে দান করা। এটা লিখিত দলিল ছাড়া হলেও দখল হস্তান্তর প্রমাণ জরুরি।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধিত:
– খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর সময়মতো দেওয়া হয়েছে – দলিলে এই লাইনটি থাকলে তা একটি ভালো চিহ্ন।
স্বতন্ত্র খতিয়ান:
– নিজ নামে তৈরি একক খতিয়ান, যেখানে কোনো অংশীদার নেই।
বিষফল দলিল:
– কোনো আইনগত ভুল বা জালিয়াতির কারণে দলিল বাতিলযোগ্য হয়ে যায় – একে বিষফল বলা হয়।
সংযুক্ত খতিয়ান:
– একই খতিয়ানে একাধিক দাগ বা জমির অংশ থাকলে তা সংযুক্ত খতিয়ান হয়।
প্রত্যর্পণ দলিল:
– পূর্বে দেওয়া দান বা হেবা যদি ফেরত নেওয়া হয়, তাহলে সে দলিল হয় প্রত্যর্পণ দলিল।
ধারাবাহিক মালিকানা:
– জমির মালিকানা ক্রমে কীভাবে হস্তান্তর হয়েছে তার ধারাবাহিকতা। দলিলে সাধারণত লেখা থাকে: “উক্ত জমি পূর্বে অমুকের ছিল, তিনি অমুককে বিক্রি করেন...।”
ভু-উন্নয়ন কর রসিদ সংযুক্ত:
– দলিলের সাথে জমির খাজনার রসিদ বা কাগজ সংযুক্ত করা হয়েছে।
নির্ধারিত মূল্য ছাড়াই হস্তান্তর:
– বিনা মূল্যে জমি দেওয়া হয়েছে। সাধারণত দান বা হেবা দলিলে লেখা থাকে।
দাবি ত্যাগ:
– পূর্ব মালিক বা অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের লিখিতভাবে জমির মালিকানা দাবি ত্যাগ করার ঘোষণা।
জরিপ ও রেকর্ডের মিল:
– দলিল, খতিয়ান এবং জরিপ মানচিত্রে জমির দাগ, পরিমাণ এবং মালিকানা একই কিনা তা মিলিয়ে দেখা।
আরও গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও জমি-সংশ্লিষ্ট শব্দ ও ব্যাখ্যা।
সংশ্লিষ্ট রেকর্ড হতে প্রাপ্ত দাগ নম্বর:
– দলিলে উল্লেখ থাকে, দাগ নম্বরটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে (সিএস/এসএ/আরএস/বিএস জরিপ)। ভুল দাগ মানে ভুল জমি!
সার্ভেয়ার কর্তৃক নির্ধারিত সীমানা:
– অর্থাৎ একজন অনুমোদিত জরিপকারীর দ্বারা চিহ্নিত জমির সীমানা। এটি থাকলে দলিলের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
স্মারক নম্বর:
– সরকারি বা আইনগত চিঠিপত্রে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট নম্বর। দলিলে কোনো অফিসিয়াল কাগজ সংযুক্ত থাকলে স্মারক নম্বর উল্লেখ থাকে।
জারিকৃত আদেশ:
– ভূমি অফিস বা কোর্ট থেকে কোনো নির্দেশনা এসেছে কি না, সেটি দলিলে লেখা থাকে।
বহাল দলিল:
– পূর্ববর্তী দলিল যদি আদালত বা ভূমি অফিস দ্বারা বৈধ ও কার্যকর বলে গণ্য হয়, তাকে বহাল দলিল বলে।
দখল ও ভোগদখলের উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি সংযুক্ত:
– দলিলের সাথে যদি পুরাতন ট্যাক্স রসিদ, খাজনা রশিদ, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি থাকে, তা ভোগদখলের প্রমাণ।
পরিশোধযোগ্য অর্থ ব্যতীত হস্তান্তরিত:
– হেবা বা দান দলিলে এই লাইন থাকে, অর্থাৎ কোনো বিনিময়মূল্য ছাড়াই জমি দেওয়া হয়েছে।
অস্থায়ী খারিজ বা অস্থায়ী নামজারি:
– মালিকানা চূড়ান্ত না হলেও সাময়িকভাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—সতর্ক থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট জমির প্রতি তৃতীয় পক্ষের কোনো দাবি নাই
– অর্থাৎ বিক্রেতা ছাড়া অন্য কেউ জমির উপর মালিকানা দাবি করতে পারবে না, এমন ঘোষণা।
অস্থাবর সম্পত্তি:
– দলিলে যদি ঘর, দালান বা কোনো নির্মাণকাজের কথা থাকে, সেগুলোকে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয় (স্থাবর=জমি, অস্থাবর=নড়ানো যায় এমন সম্পত্তি)।
বিতর্কিত দলিল:
– একাধিক ব্যক্তি এক জমি নিয়ে দলিল করেছে—যা পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করে। যাচাই না করে এমন দলিল কিনবেন না।
স্বতঃপ্রণোদিত দলিল বাতিল:
– কোনো পক্ষ নিজের ইচ্ছায় দলিল বাতিল করেছে।
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল বাতিল রেকর্ড আছে কিনা তা যাচাই:
– অনেক সময় কেউ দলিল রেজিস্ট্রি করে আবার পরে বাতিল করে—ক্রয়ের আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
বহির্ভূত দলিল:
– দলিলে যে জমির কথা বলা আছে, সেটি যদি ওই মালিকের নামে না থাকে, তাহলে তা বহির্ভূত দলিল।
ওয়াকফ দলিল:
– ধর্মীয় উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে দানকৃত সম্পত্তি। এটা বিক্রি, হস্তান্তর বা উত্তরাধিকারসূত্রে দেওয়া যায় না।
ক্যান্সেল রেজিস্ট্রি (Cancel Registry)
– দলিল বাতিল সংক্রান্ত দলিল। এর অস্তিত্ব থাকলে সংশ্লিষ্ট মূল দলিল অকার্যকর।
১. ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
২. কাঠা
৩. বিঘা এবং
৮. একর
ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপে এই পদ্ধতিতেই লিপিবদ্ধ করা হয়।
🏠 ভূমির পরিমাপ বা জমির মাপ।
ভূমির পরিমাপ বা জমির মাপ-ঝোঁক মানেই এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা। ভূমি বা জমির ক্ষেত্রফল নির্ণয়ে জ্যামিতির সাধারণ জ্ঞান জানা আবশ্যক। বিশেষ করে বিভিন্ন ভুজ (যেমন- ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ এবং বহুভুজ) এর ক্ষেত্রফল বের করার একাধিক সূত্র আত্মস্থ করা দরকার।
কারণ জমি সব সময় চুতর্ভুজ আকারের হবে এমন ধারণা থেকে বিরত থাকুন। ভূমির আকার ভিন্ন হলে তা পরিমাপের ক্ষেত্রে ভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হবে। শুধু চতুর্ভুজের সূত্র দিয়ে জমি পরিমাপ করতে গেলে, এতে সঠিক ক্ষেত্রফল আশা করা যায় না।
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল = ½ (ভূমি×উচ্চতা)
চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য×প্রস্থ
বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = (বাহু)^2
রম্বসের ক্ষেত্রফল = ½×কর্ণদ্বয়ের গুণফল
সামন্তরিকের ক্ষেত্রফল = ভূমি×উচ্চতা
সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল = ½(অন্তস্থ বৃত্তের ব্যাসার্ধ × পরিসীমা)
ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল = ½(সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের দৈর্ঘ্যের যোগফল × সমান্তরাল রেখাদ্বয়ের লম্বদূরত্ব বা উচ্চতা।
ভূমি পরিমাপের ক্ষেত্রে সরোজমিনে ২০/২১ ধরনের ভূমির আকার আকৃতি দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল ভূমি পরিমাপের ক্ষেত্রে উপরের উল্লেখিত সূত্রের সমন্বয়ে , অধিকতর সঠিক সূত্রটি যা ভূমির আকারের উপর নির্ভর করে, তা দিয়ে ভূমির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হবে।
মনে রাখতে হবে ভূমি পরিমাপের ক্ষেত্রে আকারের ওপর নির্ভর করে,সঠিক নিয়মের সূত্র প্রয়োগ করে, ভূমির পরিমাপ করাই ভূমি পরিমাপের মূল কথা।
আপনি আপনার জমির অধিকার হারাবেন না — যদি আপনি সঠিক পথে থাকেন।
🗣️ পোস্টটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে শেয়ার করুন — যেন অন্যরাও সচেতন হয়।
✊ শেষ কথা:
ছেলে-মেয়েদের স্কুলের বই পড়ান ভালো কথা, কিন্তু দলিল পড়াও শেখান—কারণ শিক্ষা শুধু পাস নম্বর নয়, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার সাথেও জড়িত।
জেনে রাখা ভালো।
ভূমি পরিমাপের জন্য Standard Measurement যা “সরকারি মাপ” বলে যা পরিচিত, তার জন্য নিন্ম পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই পরিমাপ সারাদেশে সর্বজন গৃহীত।
ধন্যবাদ।

0 Comments
please do not enter eny spam link in the comment box.